রাতের ভোট আয়োজনে সাহায্য করেছে গোয়েন্দা সংস্থা, ইসির করার কিছু ছিল না: জবানবন্দিতে নূরুল হুদা

/ ১০৪ Time View
সময় : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫

নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের আগেই গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ দখলে নেয় এবং সরকারের অনুগত পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি বুঝতে পারি, সব শেষ হয়ে গেছে।

২০১৮ সালের ভোট কারচুপির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেছেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

 

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অন্ধকারে রেখেই আওয়ামী লীগ সরকার ভোট কারচুপি করেছিল, এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার ছিল না।

 

সিইসির এই স্বীকারোক্তি আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে বলে টিবিএসকে নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার।

 

 

জবানবন্দিতে নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের আগেই গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ দখলে নেয় এবং সরকারের অনুগত পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি বুঝতে পারি, সব শেষ হয়ে গেছে।

 

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় পার হওয়ার পর জানতে পারি, কিছু কেন্দ্রে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। তখন নিশ্চিত হই, রাতেই ভোট দেওয়া হয়েছে। আমাদের অন্ধকারে রেখে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচনে অনিয়ম করা হয়েছে।

 

নূরুল হুদা আরও বলেন, এই বিষয়ে আমি অনুতপ্ত ছিলাম। যেহেতু গেজেট প্রকাশ হয়ে গেছে, তখন আমি নির্বাচন বাতিল করতে পারি না। তখন আমার হাতে ক্ষমতাও নেই।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচন কমিশনকে অন্ধকারে রেখে পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা রাতের ভোট আয়োজনেও সহায়তা করেছে। মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তাই তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীনের অধীনে ছিলেন, যিনি সরকারের হয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতেন। এই অবস্থায় আমার একার পক্ষে কিছু করার সুযোগ ছিল না।

 

প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

 

গত ২৭ জুন চার দিনের রিমান্ড শেষে একই মামলায় পুনরায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। গত ২৯ জুন একই মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গত ২২ জুন দশম থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা তিন সিইসি যথাক্রমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান।

 

পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।

 

সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category